বিনাসয়াবীন-২ এর চাষাবাদ পদ্ধতি







সয়াবিন বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেলবীজ ফসল। বর্তমানে বাংলাদেশে যা সয়াবিন উৎপাদিত হয় তা চাহিদার এক পঞ্চমাংশ মাত্র। এ চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীগণের উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টার অংশ হিসাবে সয়াবিনের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন যা “বিনাসয়াবিন-২” নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে সারাবছর চাষাবাদের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে । এ জাতটি প্রধান বৈশিষ্ট সম্পর্কে জাতটির প্রধান উদ্ভাবক উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. মোঃ আব্দুল মালেক, বলেন- উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছের উচ্চতা রবি মৌসুমে ২৭-৪০ সে.মি. এবং খরিফ-২ মৌসুমে ৩৫-৪২ সে.মি.। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫টি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৪০-৫০টি। বীজ আকারে মাঝারি ধরণের এবং ১০০ বীজের ওজন ১৩.০-১৩.৮ গ্রাম। বীজে আমিষ, তেল এবং শর্করার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩, ১৯ এবং ২৬%। রবি এবং খরিফ-২ মৌসুমে জীবনকাল যথাক্রমে ১১৫ এবং ১১৭ দিন। রবি এবং খরিফ-২ মৌসুমে যথাক্রমে ২.৫-২.৮ এবং ২.৭-৩.৩ টন/হে. ফলন পাওয়া যায়।

মাটি ও আবহাওয়া: রবি এবং খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবীন চাষ উপযোগী। বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে সয়াবীন চাষ করা যায়। খরিফ মৌসুমের জন্য উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযোগ্য জমি এবং রবি মৌসুমের জন্য মাঝারি থেকে নিচু জমি নির্বাচন করতে হবে। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, যশোহর, ময়মনসিংহ অঞ্চল সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী এলাকা।

জমি তৈরি: মাটির প্রকারভেদে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে এবং আগাছামুক্ত করে বীজ বপন করতে হবে। মই দিয়ে জমি সমান করার পর সুবিধামতো আকারে প্লট তৈরি করে নিলে পরবর্তীতে জমিতে সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন ও অন্তরবর্তীকালীন পরিচর্যা সুবিধা হয়।

বপনের সময়: রবি ও নাবী খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবীন বপন করা যায়। রবি মৌসুমে পৌষের প্রথম থেকে মাঘ মাসের মাঝামাঝি (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ) পর্যন্ত এবং নাবী খরিফ মৌসুমে মধ্য আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (জুলাইয়ের প্রথম থেকে আগষ্টের শেষ) পর্যন্ত। খরিফ মৌসুমে উল্লিখিত সময়ের আগে বপন করলে ফুল আসতে কিছুটা বিলম্ব হয় বিধায় ফসলের আয়ুকাল দীর্ঘায়িত হয়।

বীজের হার: সারিতে বপনের ক্ষেত্রে প্রতি একরে ২২ কেজি (হেক্টরে ৫৫ কেজি) এবং ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে প্রতি একরে ২৮ কেজি (হেক্টরে ৭০ কেজি)।

বপন পদ্ধতি: সয়াবীন বীজ সারিতে বপন করা উত্তম। তবে মাসকলাই বা মুগ ডালের মতো ছিটিয়েও বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দুরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সেঃমিঃ দিতে হবে। সারিতে ৩-৪ সেঃমিঃ গভীর করে বীজ বপন করতে হয়। ছিটিয়ে বপন করলে চাষের পর বীজ ছিটিয়ে মই দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। বপনের পূর্বে ছত্রাক বা কীটনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিলে ভালো।

সারের মাত্রা ও প্রয়োগ: জমির উর্বরতা সব জায়গায় সমান নয়। তাই কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে সারের মাত্রা বিভিন্ন রকম হয়। সয়াবীন চাষের জন্য সাধারণভাবে অনুমোদিত সারের মাত্রা হলঃ একর প্রতি ইউরিয়া ২০-২৫ কেজি অথবা জীবাণুসার প্রতি কেজি বীজের জন্য ২৫-৩০ গ্রাম, টিএসপি ৬০-৭০ কেজি, এমওপি ৩৫-৪০ কেজি, জিপসাম ৩৫-৪৫ কেজি। রাসায়নিক সারসমূহের সাথে পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার কম লাগবে। শেষ চাষের পূর্বে রাসায়নিক সার ছিটিয়ে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।

জীবাণুসার প্রয়োগ ও ব্যবহার পদ্ধতি: সয়াবীন গাছ রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গাছের শিকড়ে জমা করতে পারে। বপনের আগে বীজে জীবাণুসার মিশিয়ে বপন করলে গাছের শিকড়ে নডিউল বা গুটি সহজে সৃষ্টি হয় এবং এ নডিউল থেকে গাছ নাইট্রোজেন পায়। এক কেজি ভিজা সয়াবীন বীজের মধ্যে ২০-৩০ গ্রাম জীবাণুসার ছিটিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে বীজের গায়ে সমভাবে মিশে যায়। জীবাণুসার মিশানোর পর বীজ বেশি সময় রোদে ফেলে রাখলে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই তাড়াতাড়ি বীজ বপন করতে হবে।

আন্তঃপরিচর্যা: চারা গজানোর ২০-২৫ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে, জাতভেদে সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ২.৫-৪.০ ইঞ্চি। তবে প্রতি বর্গ মিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৫৫টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০টি গাছ রাখা উত্তম। রবি মৌসুমে গাছে ফুল ধরা এবং ফল বা শুঁটি ধরার সময় সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হতে পারে। বৃষ্টি না হলে প্রথম সেচ বীজ গজানোর ২০-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ গজানোর ৫০-৫৫ দিন পর দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে সাধারণত কোন সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং জমিতে পানি জমে গেলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন: বিছাপোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা সয়াবীনের মারাত্মক ক্ষতি করে। ডিম থেকে ফোটার পর ছোট অবস্থায় পোকাগুলো একস্থানে দলবদ্ধভাবে থাকে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত গাছের পাতা খেয়ে জালের মতো ঝাঁঝরা করে ফেলে। এ পোকা দমনের জন্য আক্রান্তপাতা দেখে পোকাসহ পাতা তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে সেভিন ৮৫ এসপি ৩৪ গ্রাম পাউডার প্রতি ১০ লিটার পানিতে অথবা এডভাটেজ ২০ এসসি ৩০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে ¯েপ্র করতে হবে।

কান্ডের মাছি পোকা: এ পোকার কীড়া কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে আক্রান্ত গাছের অংশ বিশেষ অথবা সম্পূর্ণ গাছ দ্রুত মরে যায়। এ পোকার দ্বারা আক্রান্ত হলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২৫-৩০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে ¯েপ্র করতে হবে।

হলুদ মোজাইক ভাইরাস: সয়াবীনের সবুজ পত্রফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালী বা হলুদ রঙের চক্রাকার দাগের উপস্থিতি এ রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিনাসয়াবীন-২ হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল। তবে সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমানো যায়।

কান্ড পঁচা রোগ: মাটিতে অবস্থানকারী ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের পাতা হলুদ হওয়া দেখেই এ রোগের আক্রমণ সনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত গাছের কান্ড এবং মূলে কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। গভীর চাষ এবং জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলে এ রোগের উৎস নষ্ট করা যায়।

ফসল সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ

ফসল পরিপক্ক হলে গাছগুলো শুঁটিসহ হলুদ হয়ে আসে। এ সময় সয়াবীন গাছ মাটির উপর হতে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দানাগুলো আলাদা করতে হবে। মাড়াই করা বীজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে ঠান্ডা করে গুদামজাত করতে হবে। সয়াবীনের অংকুরোদগম ক্ষমতা সাধারণ অবস্থায় বেশি দিন বজায় থাকে না। দুই থেকে তিন মাস পরই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই পরবর্তী মৌসুমে লাগানোর জন্য বীজ সংরক্ষণ করতে হলে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:

১. বীজ বিশেষ যত্নসহকারে ত্রিপল বা চাটাইয়ের উপর শুকাতে হবে। ২-৩ ঘন্টা করে কয়েক দিন শুকাতে হবে। শীতকালে একটানা ৪-৫ ঘন্টা ধরে শুকালেও কোন ক্ষতি হয় না। বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে বীজের আর্দ্রতা ৯% এর বেশি না থাকে।

২. শুকানো বীজ ভালোভাবে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত পঁচা বীজ বেছে ফেলে দিতে হবে।

৩. পলিথিনের ব্যাগ, টিনের ড্রাম, আলকাতরা মাখা মাটির মটকা বা কলসীতে বীজ সংরক্ষণ করে মুখ ভালোভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ভিতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। বীজ শুকানোর পর গরম অবস্থায় সংরক্ষণ না করে ঠান্ডাা হলে সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. বীজের পাত্র অবশ্যই ঠান্ডা অথচ শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। সরাসসি মেঝেতে না রেখে মাচা বা কাঠের তক্তার উপর রাখলে ভালো হয়।

৫. মাঝে মধ্যে বীজের আর্দ্রতার দিকে নজর রাখতে হবে। বীজের আর্দ্রতা বেড়ে গেলে প্রয়োজন মতো রোদে শুকিয়ে পূর্বের ন্যায় একই নিয়মে পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

লেখকঃ *প্রিন্সিপাল সায়িন্টিফিক অফিসার,

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ।

শেকৃবির ‘৯০ মিনিট স্কুল কৃষির সমস্যা সমাধানে







শহরাঞ্চলে ফুল, ফল ও সবজির পারিবারিক বাগান এখন আর কেবলই সৌখিনতা বা পারিবারিক প্রয়োজন নয়। পরিবেশ রক্ষা আর নগরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে অনেক দেশেই বাড়ির ছাদ, বারান্দা, গাড়ি বারান্দা, ফুটপাত, পার্ক, সরকারি খাস ভূমি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে উদ্যান ফসল ও বাহারি ফুলের গাছের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে সবুজ নগরায়ন। আমাদের দেশেও হাঁটি হাঁটি পা পা করে ছাদ বাগানের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে শহরে সবুজায়ন শুরু হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নয় বরং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এদেশে ছাদ বাগানের সূচনা । কিন্তু এই বাগান করতে গিয়ে অনেকেই আবার বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন-গাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়া, পোকামাকড়ের আক্রমণ, কোন ফসলের কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ কার্যকর, গাছ মরে যাওয়া, আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়া, কখন কোন গাছ লাগাতে হবে ইত্যাদি। এ জাতীয় সমস্যার সমাধানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিনের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ‘৯০ মিনিট স্কুল’ নামে বিশেষ সেবা। এ সেবার আওতায় বিশেষ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের গ্রাফটিং বা কলমের চারা তৈরী করার কলা কৌশলও শিখানো হচ্ছে হাতে কলমে।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় প্রশ্ন ও উত্তর পর্বের। প্রতি শুক্রবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে সকাল ১০টা হতে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত (৯০ মিনিট) চলে এ প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব। এ সময় বাগান মালিকরা তাদের সমস্যার কথা জানান এবং অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন সেসব সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দেন। এ সেবা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। ভিডিওগুলো পরবর্তীতে আর্কাইভে থাকছে।

অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন বলেন, বাগান করতে গিয়ে বাগানিরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মুখে পড়েন। এ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপযুক্ত উত্তর পান না। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার কথা চিন্তা করেই আমরা ৯০ মিনিট স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, এই প্রশ্নোত্তর পর্বের উদ্যোক্তা ফেসবুক গ্রুপ গ্রীন বাংলাদেশ। এ গ্রুপে প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট বিষয় উপর বাগানিদের সমসাময়িক সমস্যা জানতে চাওয়া হয়। এরপর বাগানিরা সেখানে তাঁদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। এই সাত দিনের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয় শুক্রবার। প্রশ্নকারী ব্যক্তিরা তাঁদের প্রশ্নের উত্তর সরাসরি জানতে পারছে সেখানে। এ ছাড়া আগ্রহী লোকজনকে হাতে-কলমে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জুরাইন থেকে আগত শাকিলা ইসলাম জানান, তার বাসার ছাদে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু তাঁর মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। গাছ থেকে আশানুরূপ ফলনও পাচ্ছেন না তিনি। এসব সমস্যার সমাধান জানতে তিনি ছুটে এসেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ মিনিট স্কুলে। এখানে এসে উপযুক্ত সমস্যা সমাধান পেয়ে তিনি খুবই খুশি।

প্রশিক্ষণার্থীর শাহনাজ পারভীন ৯০ মিনিট স্কুল ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে সকালে ক্লাসে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমন করে যদি সবগুলি ক্লাসের ভিডিও পাই তাহলে না যেতে পারার দুঃখটা কমে। এই দূরশিক্ষণের মাধ্যমে একদম প্রত্যন্ত এলাকার একজন বেগুন চাষী বা পাহাড়ি কোন মেয়ের শখের লেবু গাছ বাঁচানোর জন্য কি করতে হবে তা সহজেই বুঝতে পারবে। তাদের হতাশা আর অসহায়ত্ব কেটে যাবে। কৃষিবিভাগ যা করতে পারছে না তাদের হাজার হাজার কর্মী নিয়ে আপনি একাই এই ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে তা করে যাচ্ছেন। তিনি আরও লিখেছেন, গ্রামের বা রক্ষনশীল পরিবারের মেয়েরা যাদের বাইরে চলাচল ও লোকের সাথে কথা বলায় ততটা স্বাধীনতা নাই। কিন্তু বাসার আঙিনায় বা ছাদে ছোট্ট একটা বাগান আছে। তাদের জন্য এটা খুবই কার্যকর উদ্যোগ।

২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া এ স্কুলের কর্মসূচি ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে। প্রতি শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেড় থেকে দুইজন অংশগ্রহণ করছে। বাণিজ্যিকভাবে ভাসমান সবজি চাষ, গোলাপ চাষ, প্লান্ট নিউট্রিউশন, দেয়াল কার্পেট গাছ, মাটি ও মাটি তৈরি নিয়ে কথা, ক্যাকটাস চাষ, টবে কিভাবে গাছ লাগাতে হয় প্রভূতি বিষয় সম্পর্কে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমসমায়িক বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বাগান করার পর উচ্ছিষ্ট বা অবশিষ্ট গাছের চারা ফেলে না দিয়ে অপরকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্যও আমরা উৎসাহ দিতে ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।

নতুন দিগন্তের হাতছানি পোল্ট্রি শিল্প সুরক্ষায়





প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যতম উপখাত হিসাবে পোল্ট্রি শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে।



দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান আমিষের চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ হাজার ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে যার সাথে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। দেশের মোট মাংসের চাহিদার ৪০-৪৫ শতাংশ আসে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। ডিম এবং মাংস সরবরাহের মাধ্যমে দেশের প্রোটিন ঘাটতি পূরণে পোল্ট্রিখাতের অবদান সর্বজনবিদিত। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই শিল্প প্রায়শঃই সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির যার মধ্যে রোগ-বালাই অন্যতম। পোল্ট্রির বিজ্ঞানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সঠিকভাবে রোগবালাই নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদে পোল্ট্রির রোগের উপর বাংলাদেশের ৯০ জন প্রাণিচিকিৎসককে আর্ন্তজাতিক উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়েছে ফান্স।






বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রাণী স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের সেভা সান্তে এনিমালি (সেভা) ও বিশ্বের সুপ্রাচীন প্রাণিচিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স ন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগ কর্তৃক বাস্তায়িত ৩য় বারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবছরের জুলাই মাসে শুরু হয়ে অক্টোবর মাসে সমাপ্ত হয়। তিন বছরের জন্য স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মাধ্যমে প্রতি বছর সারা দেশের ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে চার মাসে চার সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তিন সেশনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মরত পোল্ট্রি রোগ সংশ্লিষ্ট ২৪ জন ভেটেরিনারিয়ান, বেসরকারি খাতে কর্মরত পোল্ট্রি রোগ সংশ্লিষ্ট ৪৮ জন ভেটেরিনারিয়ান এবং সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা কিন্তু পোল্ট্রি রোগ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার গঠনে আগ্রহী ১৮ জন নির্বাচিত ভেটেরিনারিয়ান প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেভা’র পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি স্কুল অফ প্যারিসের আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিন বছর মেয়াদে বাস্তায়িত এই প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে শেকৃবির এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ডঃ মোঃ মোফাজ্জল হোসাইন এবং প্রোগ্রাম ইন চার্জ হিসেবে মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন।

গত ২৫ অক্টোবর ট্রেনিং লজিস্টিক সাপোর্ট প্রোভাইডার এসিআই এগ্রিবিজনেস কর্তৃক তেজগাঁওস্থ এসিআই সেন্টারে আয়োজিত এক জাকজমকপূর্ণ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফলভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণি চিকিৎসকদের মধ্যে উক্ত প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণ করা হয়। এসিআই এগ্রিবিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ, এইচ আনসারীর সভাপতিত্বে এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম ইন চার্জ ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব কাজি ওয়াসিউদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবির পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস, এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোঃ মোফাজ্জল হোসাইন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম, ফরাসি ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর কন্টিনিউয়াল এডুকেশনের প্রধান প্রফেসর ড. কারিম আদযু, সেভা সান্তে এনিমালি ফ্রান্সের টেকনিক্যাল ম্যানেজার প্রফেসর ড. মুন্সেফ বউযুইয়া, প্রজেক্ট ম্যানেজার ড. ম্যারি ডুক্রোটয়। অনুষ্ঠানে গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিল্নে ফ্রান্স এম্বাসি বাংলাদেশের ডেপুটি হেড অফ মিশন, পলিটিক্যাল এন্ড কালচারাল এফেয়ার মি. এফজি টেকো।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের জলবায়ুসহ সার্বিক পরিবেশ পোল্ট্রি চাষে উপযোগী বিধায় এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই শিল্পকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে হলেও পোল্ট্রির রোগবালাই চিকিৎসা ও প্রতিরোধ এবং আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাবে বারবার হোচট খাচ্ছে দেশের গুরুত্বপুর্ণ এই শিল্প। সুস্থ-সবল ও নীরোগ পোল্ট্রি শিল্প নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপুর্ণ এই শিল্প। রক্ষার্থে আয়োজিত এ ধরণের প্রশিক্ষণ নি:সন্দেহে পোল্ট্রি সেক্টরকে অনেক সমৃদ্ধ করবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ার লক্ষ্যে এধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ট্রেনিং প্রোগ্রাম ইন চার্জ ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলাম জানান ২০১৬ সালের ২২ জুন বাংলাদেশের প্রাণি চিকিৎসকদের পোল্ট্রির বিজ্ঞানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সঠিকভাবে রোগবালাই নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও উন্নত জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় প্রাণীস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেভা সান্তে এনিমালি (সেভা) এবং ফ্রান্স ন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর সাথে তিন বৎসর মেয়াদে বাস্তায়নযোগ্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে শেকৃবি’র এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ। স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় শেকৃবি’র মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মাধ্যমে গত তিন বৎসর যাবত সারাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্য থেকে প্রতিবছর নির্বাচিত ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে চার সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ বছর তৃতীয়বারের মত এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলো। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী ভেটেরিনারিয়ানগণ দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পোল্ট্রি শিল্পকে লাভজনক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি আরো জানান, এ ধরণের প্রোগ্রাম স্থানীয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে ভেটেরিনারি শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নিবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের পোল্ট্রির রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী প্রাণিচিকিৎসদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি’র বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সেভা সান্তে এনিমালি ফ্রান্সের বাংলাদেশি বিজনেস পার্টনার ও ট্রেনিং লজিস্টিক সাপোর্ট প্রভাইডার এসিআই এগ্রিবিজনেস এর বিজনেস ম্যানেজার ডা. মোঃ মইনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ মিডিয়ায় কর্মরত ব্যক্তিবর্গ।

সূত্রঃ krishibarta